দেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড.
মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, প্রবাসীরা সব সময়ই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করেছে।
শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ম্যানহাটনের নিউ ইয়র্ক ম্যারিয়ট মার্কুইসে “এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশিজ” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা এক বছর আগে কী পরিস্থিতিতে তিনি সরকার গঠন করেছিলেন তা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এখন পুনর্গঠনের কাজ চলছে। প্রবাসীরা যে যেখানেই আছেন দেশের জন্য কাজ করতে হবে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ রেমিট্যান্সের ২১ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনে অবদান রাখার জন্য বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের প্রশংসা করেন ড. ইউনূস। তিনি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে তার সরকারের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন। আপনাদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পেছনে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা হোটেল
অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। দেশে যথেষ্ট তরুণ জনশক্তি রয়েছে। এই তরুণ মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে এবং বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করার আহ্বান জানান।
আঞ্চলিক অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন- নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাত রাজ্যে সমুদ্র না থাকায় স্থলবেষ্টিত। আমরা যদি তাদের জন্য সমুদ্র খুলে দিই, তাহলে সবাই উপকৃত হবে, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে সবাই বাংলাদেশে ছুটে আসবে। তারা সামুদ্রিক সম্ভাবনা অন্বেষণের জন্য ইতিমধ্যে অনেক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বঙ্গোপসাগরের নিচে সংরক্ষিত গ্যাস অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কক্সবাজার-মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য প্রস্তুত।ঢাকা হোটেল
তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরেন। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পর মুদ্রাস্ফীতি ও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছেছে। এক বছরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি রেমিট্যান্সে ২১ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রশংসা করেন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারি উদ্যোগের রূপরেখা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার আয়োজনে এনআরবি কানেক্ট ডে’র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে স্বাগত জানান প্রবাসীরা। ড. ইউনূসও হাত নেড়ে তাদের জবাব দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সর্বদা আপনাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করার পরিকল্পনা করছি। আপনাদের দেখে আমরা নতুন সংকল্প নিয়ে দেশে ফেরার আত্মবিশ্বাস পাই। তিনি আরও বলেন, দর্শক সারি থেকে কথা বলা খুব সহজ। কিন্তু আমরা চাই আপনারা মাঠে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন এবং একসঙ্গে কাজ করুন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায় যখন দেখলাম যে রাজনৈতিক নেতারা এই সফরে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে রাজি হয়েছেন। ঢাকা হোটেল
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ‘শুভেচ্ছা’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উদ্বোধন করেন, যা প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা, নির্দেশনা এবং বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
জাতিসংঘের অধিবেশনের মতোই এই অনুষ্ঠানেও প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন সফরসঙ্গী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের ও এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ আরও অনেকে। তারা বাংলাদেশ প্রশ্নে সবাইকে এক থাকার ওপর জোর দেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা বিএনপি নেতা হুমায়ূন কবীর, যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতের মুখপাত্র ডক্টর নাকিবুর রহমান ও এনসিপি নেতা ডাক্তার তাসনিম জারা প্যানেল আলোচনায় আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী। ঢাকা হোটেল
অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের অভিন্ন বক্তব্য ছিল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত জুলাইয়ের লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। তেমনি অংশ নিয়েছে প্রবাসীরা। আমরা বিশ্বাস করি দেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রাম মজ্জাগত। যেকোনো দুঃসময়ে লড়াই করতে জানি তার প্রমাণ জুলাই দিয়েছে। যেদিন থেকে একটি দানবীয় শাসক বাংলাদেশের বুকে চাপিয়ে বসেছে, সেদিন থেকে মানুষ লড়াই শুরু করেছে। তিনি বলেন, প্রফেসর ইউনূস যে স্বপ্ন দেখছেন, এই স্ব্বপ্নগুলোকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। তাই দরকার আমাদের একটা শক্ত কমিন্টমেন্ট। তাই আসুন একটা বিষয়ে এক জায়গায় এক হই, সেটা হলো বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে অংশগ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। বিশ্ববাসী দেখেছে আমরা বিপ্লব পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনায় ঐক্যবদ্ধ আছি। আগামী দিনেও আমরা দেশের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. ইউনূস দূরদৃষ্টি সম্পন্ন। দুনিয়াজোড়া তার সুনাম। তিনি দেশকে একটি কাঙ্ক্ষিত মানে দেখতে চান। এটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানেরও চাওয়া ছিল। আমি ড. ইউনূসের মাঝে আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তিনি বলেন, আর ৫ মাস পর দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই সরকার গঠন করবে, তারাও এভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে আশা করি।ঢাকা হোটেল
যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতের মুখপাত্র ডক্টর নাকিবুর রহমান বলেন, আমাদের ভিশন হওয়া উচিত দুর্নীতিতে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় জিরো টলারেন্স। আমরা দেখতে চাই বৈষম্যহীন একটা সমাজ, যেখানে সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। আমাদের মাঝে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়ন-অগ্রগতির স্বার্থে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। জুলাই বিপ্লবে দেশের সব মানুষ অংশ নিয়েছিলেন একটি কাঙ্ক্ষিত মানের পরিবর্তনের বুকভরা আশা নিয়ে। তাদের সে আশার মূল্য দিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
তাসনিম জারা তার বক্তৃতায় নারী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার ওপর জোর দেন, যেখানে সবার অংশগ্রহণ ও মতামত থাকবে। তিনি বলেন, ‘যখন সবাই একসঙ্গে কাজ করে, ইতিহাস বদলায়। আমরা একসঙ্গে ইতিহাস বদলাবো।’ঢাকা হোটেল
‘ব্রিজিং বর্ডারস: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ডায়াস্পোরা এনগেজমেন্ট’ শীর্ষক একটি ইন্টারেক্টিভ প্যানেল আলোচনার পরে বিশেষ দূত লুৎফী সিদ্দিকী সঞ্চালনা করেন। ইভেন্টটি বাংলাদেশে সুযোগগুলো অন্বেষণ, নাগরিক সেবা অ্যাক্সেস এবং টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের জন্য প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা জোরদার করার একটি প্ল্যাটফরম সরবরাহ করেছিল এবং এনআরবিদের তাদের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ এবং ধারণাগুলো সরাসরি নীতিনির্ধারক এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার সুযোগ প্রদান করেছিল।
প্রশ্নোত্তর পর্বে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বিমানবন্দরে রাজনীতিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ওয়াশিংটন দূতাবাস কিংবা নিউ ইয়র্কের কনস্যুলেটের কারও ব্যর্থতা থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র : মানবজমিন।