কোনো সরকারি কর্মকর্তার পদোন্নতি হলে, পুরস্কার পেলে বা অন্যকোনো অর্জনযোগ ঘটলে কিছু লোক ফেসবুক/ইউটিউবে হামলে পড়বেন ‘সৎ, নির্লোভ, দক্ষ ওমুক কর্মকর্তার তমুক অর্জনে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন’। এই যে কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে সততার সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া- এতে করে সৎ বা সততা শব্দগুলোকেই ‘খেলো, সস্তা আর মূল্যহীন’ করে তোলা হচ্ছে কিনা, আমার মনে হয়, এটি ভাববার সময় এসে গেছে। বলি, যাকে/যাদেরকে চোখের সামনে শত কোটি অবৈধ টাকা উপার্জন করতে দেখেছেন/দেখছেন, সামান্য একটু সুদৃষ্টি পাওয়ার আশায় নির্বিচারে তাদেরকে সততার সার্টিফিকেট বিলিয়ে দিতে বিবেকে একটুও বাঁধে না ভাই আপনাদের!
কতই না ভালো হতো, যদি এমন একটা ব্যবস্থা থাকত যে, কাউকে সৎ বলার আগে একটা মিনিমাম ক্রাইটেরিয়ায় তার সততা প্রমাণিত হয়ে আসতে হতো। যেমন আপনি চাইলেই কারো নামের আগে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যারিস্টার শব্দ জুড়ে দিতে পারেন না, তেমনি সততার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্যদেরকে ‘সৎ’ বলা নিষিদ্ধের বিধান যদি করা সম্ভব হতো! সৎ-অসৎ কর্মকর্তা নিরূপণ কোনো রকেট সায়েন্স না কিন্তু। কর্তৃপক্ষ যদি আজ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতি অফিসের দশ-বিশ জন অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আস্থায় নিয়ে তাদের কাছ থেকে তাদের বস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে, আমি নিশ্চিত সবকিছু ‘জলবৎ তরলং’ পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তারপর আবার প্রশ্ন আছে, এতে লাভের লাভ কিছু কি আদৌ হবে! দেখা গেল সততার সার্টিফিকেটও বিলানো শুরু হয়ে গেছে ভীষণ অসৎ পন্থায়। আসলে পঁচাগলা একটা সিস্টেমে শিশিভর্তি তেলের তেলেসমাতি, সত্যের অপলাপ আর মিথ্যের বেসাতি যখন অমোঘ বাস্তবতা, তখন নিরীহ ফেসবুক ব্যবহারকারীকে দোষ দিয়ে কী আর হবে। তারচে চলুন, সবাই মিলে স্রোতে গা ভাসাই। কারো সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলেই, হোন তিনি ভবিষ্যত বেগমপাড়ার সম্ভাব্য বাসিন্দা, তার প্রাপ্তিযোগানন্দে শামিল হয়ে ফেসবুক পোস্টে বিলক্ষণ ঘোষণা করে দিই ‘সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, নিষ্ঠাবান, মানবিক কর্মকর্তা অমুকের তমুক অর্জনে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন’।
আরো বেশি বেশি। কিসের এত যাচাই আর কিসেরইবা বাছাই!
মো. আনোয়ার হোসেন (শামীম আনোয়ার)
বিসিএস (পুলিশ)
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল),
নরসিংদী।
