করাপশন টক
রবিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টেলিগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগের নামে পাঁচ কোটি টাকার প্রতারণা : মূলহোতাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি

editor
নভেম্বর ৭, ২০২৫ ৭:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতাসহ দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগের একটি আভিযানিক দল এলআইসি ইউনিটের প্রযুক্তিগত সহায়তায় গত ৬ নভেম্বর ২০২৫ খ্রি. তারিখ ভোরে পঞ্চগড় জেলার সদর থানাধীন ধাক্কামারা এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা ফারদিন আহমেদ ওরফে প্রতীক (২৫)–কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ফারদিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই টিম ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানা এলাকা থেকে চক্রের সহযোগী মোঃ সাগর আহমেদ (২৪)–কে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টেলিগ্রাম অ্যাপে ‘বিদেশি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম’ নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে প্ররোচিত করত। ভিকটিমরা যখন গ্রুপে যুক্ত হতো তখন গ্রুপে কিছু সদস্য এখানে বিনিয়োগ করে কীভাবে লাভবান হয়েছে তা জানিয়ে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পোস্ট দিতো, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসকল ইতিবাচক সকল পোস্টই ছিল প্রতারণারর ফাঁদ। এভাবে ভিকটিমরা প্রলুব্ধ হয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হতো এবং চক্রের ফাঁদে পড়ত। এরপর বিভিন্ন তৃতীয় ব্যক্তির নামে খোলা ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) একাউন্ট ব্যবহার করে অবৈধভাবে টাকা লেনদেন করে আত্মসাৎ করতো। প্রতারণার শিকার বহু বিনিয়োগকারী এসব ভুয়া গ্রুপে অর্থ বিনিয়োগ করে ইতোমধ্যে সর্বস্ব হারিয়েছে। এমনকি যেসব একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হতো, সেগুলোর মালিকরা অনেক সময়ই বিষয়টি না জেনে নিজেরাই অভিযুক্ত হয়ে পড়েন।

এরকম ঘটনায় পল্টন থানায় দুইটি পৃথক মামলা রুজু হয়, এগুলো হচ্ছে- মামলা নং ১০, তারিখঃ ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ এবং মামলা নং ১২, তারিখঃ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫। উভয় মামলাই পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪২০/৪১৭/৪১৯/৪০৬/১০৯/৩৪ ধারায় দায়ের করা হয়। মামলা দুটির তদন্তভার সিআইডির উপর ন্যস্ত হলে দ্রুততম সময়ে সিআইডি এই চক্রকে শনাক্ত করে এবং চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে।

তদন্ত সূত্রে আরও জানা যায়, মূলহোতা ফারদিন আহমেদ টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে সক্রিয় থেকে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিত। সে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ৩০টিরও বেশি ব্যাংক একাউন্ট, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) একাউন্ট এবং সিমকার্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতো। অন্যদিকে, তার সহযোগী সাগর আহমেদ “Rio” নামে একটি ফেইক টেলিগ্রাম আইডি ব্যবহার করে “Alexa Wick” নামীয় গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করত, যার সদস্য সংখ্যা ছিল ৭ জন। তারা অনলাইন বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

তদন্তে আরও জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ নগদে রূপান্তরের জন্য তারা অভিনব কৌশল ব্যবহার করত। ফারদিন আহমেদ বিভিন্ন গাড়ির শোরুম থেকে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে গাড়ি কিনে এক মাসের মধ্যে কম দামে বিক্রি করে কাগজে লোকসান দেখিয়ে নগদ অর্থ তুলে নিত। এই পদ্ধতিতেই প্রতারণার টাকা ‘ক্যাশ আউট’ করা হতো।

গ্রেফতারকৃত ফারদিন আহমেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, তার নিয়ন্ত্রণাধীন একাউন্টগুলোর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লেনদেন হয়েছে। প্রতারণা চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম, একাউন্ট তথ্য ও অর্থের গন্তব্য উদঘাটনের জন্য আটক দুই আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

বর্তমানে মামলার তদন্ত কার্যক্রম সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগ পরিচালনা করছে এবং চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।