দেশবরেণ্য কবি, নজরুল গবেষক, প্রাবন্ধিক ও দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার বলেছেন, জুলাই বিপ্লব-উত্তর আগামী দিনের সাংবাদিকতা বিষাক্ত, দূষিত, কুৎসিত হবে না। সংবাদপত্রকে সত্য প্রকাশের আয়নায় পরিণত করতে হবে।
শনিবার বগুড়ার একটি হোটেলে বগুড়া প্রেস ক্লাবের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, সাংবাদিকদের বলা হতো সমাজের আয়না। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় সংবাদপত্রকে। এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, আমরা যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছি, তারা এক বা দুই টার্ম আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে। কিন্তু গ্যালারিতে যারা বসে আছেন, তারা আমৃত্যু দেশের প্রেসিডেন্ট থাকবেন। তাই সাংবাদিকের স্থান অনেক উঁচুতে।
তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে সাংবাদিকরা পচে গেছেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি পালাতে গিয়ে বর্ডারে ধরা পড়েছেন, প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বাংলাদেশ ‘হাসু’ মিডিয়ায় পরিণত হয়েছিল। আমরা সে অবস্থা থেকে উদ্ধার পেয়েছি জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে।
যুগান্তর সম্পাদক বলেন, এ বাংলাদেশ হতোই না যদি শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্ম না হতো। শহীদ জিয়া যদি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন আর কিছুই না করতেন, তবুও তিনি ইতিহাসে আজকের যে মর্যাদায় আছেন, সেখানেই থাকতেন। কারণ, স্বাধীনতার সময় নিজের পরিবার-পরিজন অরক্ষিত রেখে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, যা ইতিহাসের দ্বিতীয় নজির নেই।
তিনি আরও বলেন, বগুড়া মানে তারেক রহমান। তিনি (তারেক রহমান) বিবিসির সঙ্গে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, এমন সাক্ষাৎকার ২০ বছরে কোথাও শোনা যায়নি। এমন ঐতিহাসিক, পরিণত, সংযমী, দৃষ্টান্তমূলক রাষ্ট্রনায়কোচিত সাক্ষাৎকারে একটি আপত্তিকর শব্দও নেই। অথচ তিনি পুরো বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছেন।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কোনো সংবাদপত্রে খারাপ কথা লেখা থাকলে আমার খুব খারাপ লাগে। কারণ, এটা অকৃতজ্ঞতার চূড়ান্ত নিদর্শন। শেখ মুজিবের শাসনামলে ২৭ হাজার মানুষ বিনা বিচারে নিহত হয়েছেন। চারটি বাদ দিয়ে সব সংবাদপত্র ব্যান্ড করেছিলেন। সাংবাদিকরা রাস্তায় বাদাম বিক্রি করে খেয়েছেন। শহীদ জিয়া এ অবস্থা থেকে সাংবাদিকদের রক্ষা করেছিলেন। তিনি না হলে বাংলাদেশের সংবাদপত্র মুক্ত হতো না। সেই সংবাদপত্রে যখন শহীদ জিয়া সম্পর্কে কটুকথা বলেন, তখন খুব লজ্জা লাগে।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, হাসিনার আমলে ৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। দুই হাজারের মতো সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শত শত সংবাদপত্র, অনলাইন, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, আমার দেশ, দিনকাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন সাংবাদিকদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে ঝকঝকে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার করব। দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। সংবাদপত্রকে সত্য প্রকাশের আয়নায় পরিণত করতে হবে। যে আয়নায় শাসকরা তাদের চেহারা দেখতে পারবেন। সেই জায়গায় আমাদের সংবাদপত্রকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
বগুড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রেজাউল হাসান রানুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কালাম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিএম ইমরুল কায়েস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) আতোয়ার রহমান, দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু, দিনকালের বিশেষ প্রতিনিধি, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, বগুড়া অ্যাডভোকেটস বার সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান মুক্তা, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি রেজাউল হাসান রানু।
সূত্র: যুগান্তর।
