ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জীর্ণদশা দূরীকরণ, রেলপথ সংস্কার ও আকাশপথে অস্বাভাবিক ভাড়া কমানোসহ ৮ দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে ঢাকাস্থ সিলেটবাসীদের একাংশ। এসময় তারা সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করলে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকাস্থ বৃহত্তর সিলেটবাসীর’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে অংশ নেয়া সিলেটবাসীরা বলছেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, রেলওয়ে ও বিমানপথে চলমান জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই অঞ্চলের জনগণ প্রতিদিন নানামুখী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সিলেট দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও পর্যটন অঞ্চল। অথচ সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা এই অঞ্চলের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ১৬ বছরে সিলেটে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। ঢাকা-সিলেটের ৬ লেনের নির্মাণাধীন সড়ক এখন সিলেটের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয় বৃটিশ আমলে নির্মিত রেললাইনে কোনো সংস্কার হয়নি। লক্কড়-ঝক্কড় রেললাইনে ঘন ঘন দুর্ঘটনা হচ্ছে। নতুন একটি রেললাইন ও একটি নতুন ট্রেন চালুর ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিলেটের বিমান ভাড়াও প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। এর বাইরেও নানা ক্ষেত্রে সিলেট বঞ্চিত রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমরা স্পষ্টভাবে জানতে চাই কবে ঢাকা-সিলেট ৬ লেন সড়কের কাজ শেষ হবে, কবে রেললাইন সংস্কার ও নতুন ট্রেন চালু হবে? যদি ১৫ দিনের মনে আমাদের দাবি পূরণ না করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনে নামব।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল হক মুন্না বলেন, বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সিলেটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমাদের চার ঘন্টা সময় লাগতো, এখন লাগছে ১৮ ঘন্টা৷ প্রত্যকটি যোগাযোগ ব্যবস্থার জীর্ণ দশা। সিলেটের টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন দেবে বলে টালবাহানা করছে। আকাশপথে ১৩-১৪ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। একটি বিভাগকে পেছনে ফেলে রাখা চলবে না। প্রয়োজনে আমরা সিলেটের সঙ্গে সারাদেশে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবো। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল বৃহত্তর সিলেট। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের দিক দিয়ে একটি ভরপুর এলাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সিলেটিরা সমৃদ্ধ রাখলেও উন্নয়নের দিক দিয়ে সিলেটিরা বঞ্চিত। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান বলেন, সিলেটের রেলপথে অনুমোদিত টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস ট্রেন চালুসহ প্রতিটি ট্রেনে যদি নতুন বগি সংযোজন না করা হয় তাহলে আগামী ১লা নভেম্বর আমরা সিলেটজুড়ে ট্রেন অবরোধ করব।
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি সি এম কয়েছ সামী বলেন, আমরা বিভাগ হয়, প্রদেশ চাই। আমরা এখন অনুরোধ করেছি, কিন্তু একটা সময় বলবো- আপনাদের করতেই হবে। আমরা সিলেটের দাবি আদায়ে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলবো। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলার কথা নয়। সারাদেশে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। অথচ সিলেট অবহেলিত। বিগত সরকার সিলেটের কোনো উন্নয়ন করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উন্নয়ন তালিকায়ও সিলেট নেই।
সিলেটবাসীদের ৮ দাবি- সিলেট-ঢাকা, সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে ২টি স্পেশাল ট্রেন চালু, আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ, আখাউড়া-সিলেট সেকশনে একটি লোকাল ট্রেন চালু, আখাউড়া-সিলেট সেকশনে সকল বন্ধ স্টেশন চালুকরণ, কুলাউড়া জংশন স্টেশনে বরাদ্ধকৃত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, সিলেট-ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনী ও পারাবত ট্রেনের আযমপুরের পর ঢাকা, অভিমুখী সকল স্টেশনের যাত্রা বিরতী প্রত্যাহার। ৭. সিলেটের সাথে চলাচলকারী ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় রোধে ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন যুক্ত করা ও যাত্রীদের চাহিদা অনুপাতে প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।
মানববন্ধনে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি সি এম কয়েস সামীর সভাপতিত্বে ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন ও সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির (সিবিসাস) সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহমদের পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আকরব হোসেন মঞ্জু, সিলেট বিভাগ যোগাযোগ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন সোহেলসহ সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃদ্ধ।
সূত্র: মানব জমিন।
