আজ বুধবার (২৯-১০-২০২৫ খ্রি.) চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রামে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট হতে ৪টি অভিযোগের বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।
👉 অভিযান ০১:
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা প্রদানে হয়রানি ও নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চাঁদপুর হতে আজ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। টিম ছদ্মবেশে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে টিকেট সেকশন, আউটডোর ও ইনডোর সেবা কার্যক্রম, রোগীদের জন্য নির্ধারিত খাবার এবং রান্নাঘরের সামগ্রিক পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ সময় দেখা যায়, রোগীদের নির্ধারিত খাবারের পরিমাণ কম দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে ভর্তিকৃত রোগীদের ওয়ার্ডে গিয়ে সেবার মান, প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা যথাযথভাবে প্রদান করা হচ্ছে কি না তা যাচাই করা হয়। এছাড়া হাসপাতালের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের সঙ্গে তথ্যের সামঞ্জস্য পরীক্ষা করা হয়। অভিযানকালে সংগৃহীত তথ্যাবলির প্রেক্ষিতে টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
👉 অভিযান ০২:
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্তৃক আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার “বালুর মাঠ” খাস খেলার মাঠ/খালি জমি বেআইনিভাবে বরাদ্দ প্রদান ও দখলে সহায়তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ হতে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে টিম সিডিএ চেয়ারম্যানের দফতরে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিযোগে বর্ণিত স্থানে ২০০১ ও ২০০৫ সালে যথাযথ নিয়মে ১০১ কাঠা জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু লিজ দলিলে উল্লিখিতে ০২ বছরের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণের শর্ত অগ্রাহ্য করা হয়েছে- দীর্ঘ ২০–২৫ বছর পার হলেও বহুতল নির্মাণ কাজ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ ২০২০ সালে উক্ত জমি ব্যাংক মর্টগেজ করে ঋণগ্রহনের উদ্দেশ্যে সিডিএ থেকে অনাপত্তি (এনওসি) প্রদান করার তথ্য পায় দুদক টিম। অভিযানকালে আরও জানা গিয়েছে যে এস আলম ট্রেডিংয়ের নামে উক্ত জমিসহ অন্যান্য জমি মর্টগেজ করে জনতা ব্যাংক, চৌমুহনী শাখা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। টিম স্থানীয়ভাবে ১০১.৮৭ কাঠা জমি সরেজমিন পরিদর্শনকালে সেখানে ২টি ভাড়ায় পরিচালিত অটো কারের প্রতিষ্ঠান পায়, যেগুলো সম্পর্কিত কোনো তথ্য সিডিএ’র নথিতে পাওয়া যায়নি। লিজকৃত উক্ত জমিতে লিজ শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে কি না তা পূর্ণাঙ্গরূপে নিশ্চিত হবার জন্য সংগৃহীত নথি পর্যালোচনা করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
👉 অভিযান ০৩:
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধনভুক্ত ‘দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি’ কর্তৃক সদস্যদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুড়িগ্রাম হতে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে এনফোর্সমেন্ট টিম প্রথমে উপজেলা সমবায় অফিসে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সমিতির রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে এবং উপজেলা সমবায় অফিসার ও সহকারী পরিদর্শকের বক্তব্য গ্রহণ করে। তারা জানান, অভিযোগে বর্ণিত সমিতিটি সমবায় অফিসের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের মে মাসে সমিতির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন দুদক টিমকে জানান, লাভের আশায় তিনি সমিতিতে ৪ লাখ টাকা জমা দেন, কিন্তু সমিতি সেই অর্থের সিংহভাগ আত্মসাৎ করেছে এবং টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। পরবর্তীতে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজারের বক্তব্য গ্রহণ করা হলে তারা পরস্পরকে দায়ী করেন এবং টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আংশিকভাবে স্বীকার করেন। অভিযানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনাপূর্বক টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
👉 অভিযান ০৪:
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট ও মৈত্রী শিল্পে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, গাজীপুর হতে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে এনফোর্সমেন্ট টিম উক্ত প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালককে অনুপস্থিত অবস্থায় পায়। পরবর্তীতে কারখানা ব্যবস্থাপকের নিকট হতে বিভিন্ন সময়ের টেন্ডার আহ্বান ও কাঁচামাল ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহপূর্বক পর্যালোচনাকালে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া, মৈত্রী শিল্পের বোতলজাত পানি ও প্লাস্টিক উৎপাদন কারখানায় নতুন ক্রয়কৃত কয়েকটি যন্ত্রপাতি অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ বিষয়ে দুদক টিমের জিজ্ঞাসাবাদে কারখানা ব্যবস্থাপক সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রসমূহ বিস্তারিতভাবে যাচাইপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
