ডিলারশিপ ও চাকরির প্রলোভন দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগে। গত ২৮/১০/২০২৫ খ্রি. বিকেলের দিকে রাজধানী মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম- মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন (৫২), পিতা-মো. রফিকুল ইসলাম, মাতা- জহুরা খাতুন,স্থায়ী সাং- গ্রাম- রামনগর,থানা- করিমগঞ্জ, জেলা-কিশোরগঞ্জ, এ/পি- ৬ নং রোডের শেষ মাথা, শেখেরটেক, থানা- মোহাম্মদপুর, ডিএমপি, ঢাকা। তার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা নং-২২, তারিখ-২৯/১০/২০২৫ খ্রি. সহ ২৫টির বেশি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। সবগুলো মামলা একই রকম প্রতারণা কেন্দ্রিক।
গ্রেফতারকালীন তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কর্মী ও ডিলারশিপ নিয়োগের জন্য ভিকটিমদের নাম ও ছবি সম্বলিত আবেদনপত্র, কর্মী নিয়োগের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিভিন্ন পরিচয় সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড, কোম্পানির ভুয়া পণ্যের মূল্য তালিকা, মোবাইল ফোন, কোম্পানির পণ্যের নমুনা ও কম্পিউটার উদ্ধার করা হয়।
মামলাটির তদন্তে জানা যায়, বিভিন্ন কনজুমারস ফুড প্রোডাক্টস এর নামে কোম্পানির ডিলারশিপ ও চাকরির প্রলোভন দিয়ে প্রতারনা করতো প্রতারক চক্রটি। প্রথমে বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর পরিপাটি অফিস ফ্লোর ভাড়া নিয়ে একটি ভুয়া নামীয় পণ্যের অফিস খুলতো। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ, লিফলেট বিতরণ ও অন্যান্য মিডিয়াতে ডিলারশিপ এর বিজ্ঞাপন প্রচার করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতো। স্থানীয় খোলা বাজার থেকে ভালো গুণসম্পন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল (যেমন, চিনি,ডাল ইত্যাদি) সংগ্রহ করে সেগুলো ভুয়া নামীয় মোড়কে প্যাকেটজাত করে বাজার দরপ্রতি তুলনামূলক কম দামে পাইকারি ক্রেতাদের সরবরাহ করে সন্তুষ্টি অর্জন করতো। এরপর একইভাবে কিছুদিন মালামাল সরবরাহ করে বিশ্বাস অর্জন করার পরে বড় অঙ্কের টাকার অর্ডার আসলে সে টাকা নিয়ে অফিস বন্ধ করে দিতো। একইভাবে ভুয়া নামীয় ১৫ টি পণ্যের অফিস ভাড়া নিয়ে প্রতারণা করার তথ্য পাওয়া গেছে। তার ভাড়া করা কোনো অফিসই এক মাসের বেশি স্থায়ী হত না মর্মে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। বর্তমানে ডিএমপি’র মোহাম্মদপুর এলাকার রেডেন্সিয়াল কলেজের পাশে একটি বিল্ডিং এর ৪র্থ তলায় ‘তালুকদার এন্টারপ্রাইজ’ নামের অফিস খুলে প্রতারণাকালীন হাতেনাতে গ্রেফতার করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগ।
আরও জানা যায়, শুধু ডিলারশিপ নয় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েও প্রতারণার ঘটনাও ঘটিয়েছে চক্রটি। অফিসের বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নাম করে জীবন বৃত্তান্ত ও অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিতো। পরবর্তীতে বেতন প্রদানের পূর্বেই রাতের আঁধারে অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দিতো। গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন (৫২) বিগত ০৭ বছরে অন্তত ৩০০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এরকম প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম ঢাকা মেট্রো পূর্ব ইউনিট পরিচালনা করছে। গ্রেফতারকৃতকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দকরণ ও রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
